তদন্তের আগেই মিডিয়া ট্রায়াল উপেক্ষিত হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করার
পর প্রায়ই গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আটক ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে না আসতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন
হাইকোর্ট। হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চের দেওয়া এই নির্দেশনা এখন সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে আনার কোনো আইন
নেই। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদন্ত ও বিচারের আগে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যেভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যেভাবে বক্তব্য উপস্থাপন
করা হয়, তাতে ওই ব্যক্তিকে জনগণের চোখে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তারা আরও বলেন, মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে অবিলম্বে এ ধরনের অসম্মানজনক প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
আরও খবর পেতে ভিজিট করুউঃ heretipsz.xyz
তদন্তের আগেই মিডিয়া ট্রায়াল উপেক্ষিত হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
এদিকে কক্সবাজারে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ ও র্যাবের পৃথক বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, একই অপরাধের মামলায় দুই বাহিনীর ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য জনগণের মনে ভিন্ন ধারণা তৈরি করেছে। এই ক্ষেত্রে, একটি বাহিনী পৃথক বক্তব্য প্রমাণ না করে তদন্তে অন্য বাহিনীকে সহযোগিতা করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতি অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, দেশে এমন কোনো আইন নেই যে গ্রেফতারকৃত আসামিদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির হতে হবে। একজন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইন ও আপিল বিভাগে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু কত আইন ও নীতি মানা হচ্ছে? আমি মনে করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতারকৃত আসামিদের মিডিয়ার সামনে হাজির করে শুধু সাধুবাদ পাওয়ার জন্য। বাহিনীকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যখন গণমাধ্যমের
সামনে হাজির করা হয়, তখন সেই ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তদন্ত ও বিচারে ওই ব্যক্তি নির্দোষ প্রমাণিত হলে এর দায়ভার কে নেবে?
প্রকল্প পরামর্শকদের জবাবদিহি করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরামর্শকদের জবাবদিহি করতে নির্দেশ দিয়েছেন
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমি মনে করি পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যকে ফৌজদারি আইন শেখানো হয়। ফলে তারা আইন সম্পর্কে কম জানে ও বোঝে। তবে র্যাবে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্য রয়েছে। তাদের সম্ভবত আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেই।
তাই এ ধরনের আইনি প্রশিক্ষণ না থাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দুটি সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পৃথক বক্তব্য সমন্বয়হীনতার একটি উপসংস্কৃতির অংশ। কারণ বিভিন্ন সময়ে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে অসঙ্গতি দেখতে পাই।
এ ঘটনাও ঘটেছে সমন্বয়ের অভাবে। শাহদীন মালিক বলেন, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হবে।
তদন্তের আগেই মিডিয়া ট্রায়াল উপেক্ষিত হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
তবে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হাইকোর্টের নির্দেশের বাইরে কেউ কিছু করলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই।
নীতি কবে!
২০১৯ সালে বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলার আসামি তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিক মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সিআরপিসির 164 ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পরে, সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপার তাকে ব্রিফ করেন এবং তার অপরাধ স্বীকার করেন।
হত্যাটি. সেই মামলায় হাইকোর্টে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান মিন্নি। মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. অসম্মানজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। বিভিন্ন মামলার তদন্ত নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং দেওয়া হয়। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে যে যতক্ষণ না কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার শেষে আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না যে তিনিই প্রকৃত অপরাধী। ”